মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:০১ পূর্বাহ্ন
লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় গরু চুরির অভিযোগ তুলে ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আকবর আলী ওরফে ধনী (৮১) বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে চেয়ারম্যান বাড়ির টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযােগ উঠেছে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান নিজ বাড়িতে তৈরি টর্চার সেলে মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের পর আবার আরেক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন সেই আলােচিত চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন। এর আগেও এক যুবককে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের অভিযােগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে চেয়ারম্যান মহির উদ্দিনের তৈরী টর্চার সেলে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখার বিষয়টি নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী (ধনী) নিশ্চিত করেছেন।
রােববাব (৭ ফেব্রুয়ারী) বীর মুক্তিযােদ্ধার অভিযােগ পেয়ে হাতীবান্ধা থানা পুলিশের ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এর আগে গত শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) সকালে উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের জাওরানী এলাকায় চেয়ারম্যানের নিজ বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার বীর মুক্তিযােদ্ধা আকবর আলী (ধনী) উপজেলার উত্তর জাওরানী গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া সে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার। রােববাব (৭ ফেব্রুয়ারী) সকালে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার আকবর আলী (ধনী) ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযােগ করেন।
জানা গেছে, ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা গরু চুরির অভিযােগ তুলে বীর মুক্তিযােদ্ধা আকবর আলী ধনীকে নিজ বাড়ি থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ও চৌকিদার তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর চেয়ারম্যান ও চৌকিদার ওই মুক্তিযােদ্ধাকে চেয়ারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলােচনা ও সমালােচনা হলে মুক্তিযােদ্ধার বাঁধন খুলে দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা বলেন, বীর মুক্তিযােদ্ধা আকবর আলী ধনীকে চেয়ারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। পরে লােকজন ভিড় করলে তার হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। বীর মুক্তিযােদ্ধা আকবর আলী ধনী জানান, ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা গরু চুরির অভিযােগ তুলে চেয়ারম্যান ও চৌকিদার জােরপূর্বক আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখে। আমি অসুস্থ এজমা রােগী তার পরেও আমাকে দড়ি দিয়ে তারা বেঁধে রাখেন। এর পর আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকি। এ সময় দুই চোখ আমার পানি ঝড়তে থাকে। দেশ স্বাধীন করে এই প্রতিদান পেলাম আমি। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এর সঠিক বিচার চাই।
স্থানীয়রা বলছেন, ছেলে অপরাধ করলে তার শাস্তি হবে। ছেলের অপরাধে কেন তার বাবা অসুস্থ বীর মুক্তিযােদ্ধাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হলো। একজন চেয়ারম্যান কিভাবে বাবার বয়সী একজনকে গরু চুরির অভিযােগ তুলে বেঁধে রাখেন। এর বিচার হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন বলেন, মুক্তিযাদ্ধাকে বেঁধে রাখা কিংবা কােন প্রকার মারধর করা হয়নি। তার ছেলে গরু চুরির সাথে জড়িত আছেন তাই তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসে আমার বৈঠক খানায় বসানাে হয়েছে।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, অভিযােগ পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থল ওসি তদন্তকে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৬ মে নুরুজ্জামান নামে এক যুবককে চেয়ারম্যানের ওই বাড়ির টর্চার সেলে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানাের চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান, তার ছেলে জাহাঙ্গীর ও ভাই মনসুর হেলাল। এর পর গত বছর ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের তিনজন গ্রাম পুলিশ মাদকদ্রব্য নিয়ে পুলিশের নিকট আটক হয়।